Media Tunes

Media Tunes is an Online Base Media Station. Media Tunes Published Bangla & English News, Brings You Latest Bangla News Online. Get Breaking News From The Most Reliable Bangladesh Online Media.

Click On

LightBlog

Thursday, August 31, 2017

সীমান্তে দুঃসহ এক দিন

সীমান্তে দুঃসহ এক দিন





ঢেউয়ের সঙ্গে সাগরতীরে আছড়ে পড়ছিল রোহিঙ্গা শিশুর লাশ। নৌকা ডুবে গতকাল ৯ শিশুসহ ১৯ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। ভেসে ওঠা দুই শিশুর লাশ মাথায় নিয়ে তীরে ফিরছেন দুই ব্যক্তি। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সৈকত থেকে সকালে তোলা ছবি l Atiquir Rahmanপ্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে নদী ও সাগরপথে গতকাল বৃহস্পতিবার যেসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের টেকনাফে ঢুকতে চেয়েছিল, তাদের মধ্যে ১৯ জন তীরের দেখা পায়নি। এর আগেই হানা দিয়েছে মৃত্যু। প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে রোহিঙ্গাবাহী তিনটি নৌকা ডুবে মারা গেছে ১০ জন নারী ও ৯টি শিশু। অন্যদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির স্থলসীমান্তে কয়েক দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করা প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গার জীবন গতকাল আরও দুঃসহ করে তোলে ভারী বৃষ্টি।
এ ছাড়া গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে একটি রোহিঙ্গা শিশু। বুধবার টেকনাফে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় শিশুটি।
গত বুধবার গভীর রাতে এবং গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া তিনটি নৌকার একটিতে ছিলেন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের দংখালী গ্রামের আবদুর রহিম। চার মাস বয়সী ছেলে মো. কায়েস ও স্ত্রী জাহেদা খাতুনকে (২২) নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে বুধবার গভীর রাতে অন্যদের সঙ্গে নৌকায় ওঠেন তিনি। নৌকাটি টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া সাগরতীরের কিছুটা দূরে প্রবল ঢেউয়ের ধাক্কায় ডুবে যায়। এতে আরোহী ছিল ২৭ জন। তাদের মধ্যে পুরুষেরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও নারী ও শিশুদের বেশির ভাগ ডুবে মারা যায়।
গতকাল সকাল সাতটায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া সাগরসৈকতে স্ত্রী ও সন্তানকে খুঁজছিলেন আবদুর রহিম। সাগরে ভেসে ওঠা লাশ তখন জড়ো করা হচ্ছিল সৈকতের বালুচরে। আধা ঘণ্টা পর স্ত্রী-সন্তানের লাশ খুঁজে পান তিনি। কে সান্ত্বনা দেবে তাঁকে? গত সোমবার দংখালী গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গুলিতে মারা গেছেন রহিমের মা জমিলা খাতুন (৬৫) ও ছোট ভাই হামিদ হোসেন (১৮)। সন্তান আর স্ত্রীর জন্য একটু নিরাপদ জায়গা খুঁজতে বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার ভোরে নাফ নদী ও সাগরে আরও দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় মারা যান চারজন। এ নিয়ে গত দুই দিনে নৌকাডুবিতে প্রাণ গেল ২৩ রোহিঙ্গার। মৃত ব্যক্তিদের সবাই নারী ও শিশু। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছে বেশ কয়েকজন।
টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বিজিবির কঠোর অবস্থান সত্ত্বেও কিছু সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গারা ঢুকছে। বুধবার রাত ১১টার থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাদের যেকোনো সময় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।
গতকালের ভারী বৃষ্টি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্তে পলিথিনের তাঁবু টানিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের জীবনকে দুঃসহ করে তোলে। বৃষ্টি ও বাতাসে পলিথিন উড়ে যাওয়ায় দিনভর ভিজতে হয় হাজারো রোহিঙ্গা নারী ও শিশুকে। অন্য কোথাও যে আশ্রয় নেবে, সেই উপায় তাদের নেই।
গতকাল দুপুরে চাকঢালা সীমান্তে কথা হয় রোহিঙ্গা নারী জরিনা বেগমের সঙ্গে। ছেঁড়া পলিথিনের ছাউনির নিচে তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে গত পাঁচ দিন কোনো রকমে পার করেছেন তিনি। বৃষ্টির মধ্যে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে রান্না করা কঠিন। শৌচাগারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই।
এদিকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশাপাশি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ছাড়ছে সে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও। হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪১২ জন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ায় এসেছে। উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পশ্চিম হিন্দুপাড়ার একটি মুরগির খামারে আশ্রয় নিয়েছে তারা। রাখাইনের মংডুর ফকিরাবাজার গ্রামের বাসিন্দা তারা।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের প্রথম আলোকে বলেন, রাখাইন থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের যারা এসেছে, তাদের বেশির ভাগই নারী-শিশু।
পশ্চিম হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা স্বপন শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে রাখাইন থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৬ ব্যক্তি পালিয়ে এসে এই গ্রামে আশ্রয় নেয়। গতকাল সকালে আসে আরও ৩৯৬ জন। কক্সবাজার জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কয়েকজন নেতা খামারে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
মিয়ানমারের মংডুর চিকনছড়ির কুলালপাড়া থেকে পালিয়ে আসা বকুল বালা (৪৫) বলেন, গত বুধবার রাতে মুখোশধারী কিছু সশস্ত্র লোক বাড়িতে ঢুকে তাঁর স্বামী কালু রুদ্র, মেয়ে সন্ধ্যাবালা ও নাতিকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয় বলে শুনেছেন তিনি।
স্ত্রী-ছেলেমেয়ে নিয়ে পালিয়ে আসা স্বর্ণকার দ্বিজেন্দ্র শর্মা বলেন, গত ছয়-সাত দিনে রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় গুলি ও আগুনে পুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রিয়তষ শর্মা চন্দন প্রথম আলোকে বলেন, ঘরবাড়ি হারিয়ে উখিয়ায় পালিয়ে আসা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন থাকা ও খাওয়া নিয়ে চরম কষ্টে আছে।
আশ্রয় জুটবে এই আশায় প্রতিদিনই কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী অনিবন্ধিত শিবিরে আসছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। গতকাল সকালে তোলা ছবি l Media Tunesএদিকে গত বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা নিয়ে আলোচনা হয়। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদ সংস্থা চ্যানেল নিউজ এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিষদের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতি না দেওয়া হলেও বৈঠক শেষে জাতিসংঘে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ম্যাথিউ রেক্রফট বলেন, সদস্যরাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সবাই এই সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছি, সব পক্ষের প্রতি উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছি।’
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন এখনো রয়েছে উল্লেখ করে রেক্রফট বলেন, সমস্যা সমাধানে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে তাঁরা আশা করছেন।
জাতিসংঘের একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে গতকাল রয়টার্স এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, গত এক সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ২৭ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ঢুকেছে। এ ছাড়া গতকাল রাতে বিবিসি বাংলায় প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, সীমান্তের জিরো লাইনে সেফ জোন করার একটি প্রস্তাব আন্তর্জাতিক রেডক্রসের কাছ থেকে এসেছে বলে তিনি শুনেছেন। বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে, যা গঠনমূলক। একটি হচ্ছে যৌথভাবে সীমান্ত পরিদর্শন করা। আরেকটি হলো যৌথ পেট্রল। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রস্তাব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, তা হলো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা।
এইচ টি ইমাম বলেন, শিশু, বৃদ্ধ, মহিলা তাদের দিকে সব সময়ই বাংলাদেশ সরকার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। বেশ কিছু আহত ও গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে বাংলাদেশে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
  • নাফ নদী ও সাগরে নৌকা ডুবে মারা গেল ১৯ জন
  • রাখাইনের হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪১২ জন পালিয়ে উখিয়ায় এসেছে
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার, টেকনাফ ও বান্দরবান প্রতিনিধি)

No comments:

Post a Comment

Your ADS in This Blog

Adbox