Media Tunes

Media Tunes is an Online Base Media Station. Media Tunes Published Bangla & English News, Brings You Latest Bangla News Online. Get Breaking News From The Most Reliable Bangladesh Online Media.

Click On

LightBlog

Sunday, October 1, 2017

রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ছে

রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ছে




কক্সবাজার থেকে টেকনাফ মহাসড়ক ধরে ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই উখিয়ার বালুখালী শরণার্থী শিবির। মূল সড়ক থেকে ডান দিকে এক কিলোমিটার ভেতরে শিবিরটির অবস্থান। কিন্তু সড়কের মুখ থেকে শিবিরের দিকে তাকালেই দেখা যায় হাজার হাজার মানুষের মুখ। কে আসছে আর কে যাচ্ছে, তার কোনো হিসাব নেই। এত মানুষের স্রোত নিয়ন্ত্রণ করা আদৌ কারও পক্ষে যে সম্ভব নয়, তা সহজেই বোঝা যায়।
উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কর্মীরা বলছেন, শিবিরের এই পরিবেশে মানুষ হাঁপিয়ে উঠছে। তারা সব সময় হাঁটাচলা করছে। এরা শিবিরের বাইরে আশ্রয় খুঁজছে। সুযোগ পেলেই বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ শিবিরে গেলেই কম বয়সের ছেলেরা বাসায় কাজ আছে কি না বা অন্য কাজ আছে কি না জানতে চাইছে। আসলে তারা যেকোনোভাবেই শিবিরের বাইরে যেতে চাইছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সদস্য প্রথমআলোকে বলেছেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই এখনো তাদের জন্য নির্ধারিত শিবিরে আসেনি। এরা আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত ব্যক্তিদের আশ্রয়ে আছে। কেউ কেউ সুযোগমতো কক্সবাজারের বাইরে চলে যাচ্ছে। তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে তৎপরতা শুরু করেছে। এর আগে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক সংবাদ সম্মেলন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এরপর পুলিশ সারা দেশে অভিযান শুরু করে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শিবিরের বাইরে অবস্থান করছে। এদের বেশির ভাগই কক্সবাজার শহর, রামু, টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অবস্থান করছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন গতকাল শনিবার প্রথমআলোকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কক্সবাজারে ১১টি তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। তিনি জানান, গত এক মাসে ১৮ হাজার ৭৯৫ জন রোহিঙ্গাকে বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করে শিবিরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদের বেশির ভাগই ধরা পড়েছে কক্সবাজারের বিভিন্ন তল্লাশিচৌকিতে। তবে ৬৫১ জনকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ফেরত আনা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন বলছে, এদের অনেকে দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন ২৭৫ জন দালালকে ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়েছেন।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পাড়ি দেওয়া এখনো অব্যাহত আছে। গতকালও শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত থেকে কয়েক হাজার লোককে সীমান্ত পাড়ি দিতে দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১ হাজার ৮০০। এদের মধ্যে ১ লাখ ৮ হাজার শিবিরের বাইরে অবস্থান করছিল। তাদের কিছু শিবিরে ফেরত এসেছে।
শাহপরীর দ্বীপে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাংলাদেশে আসার পর তারা কোথায় যাবে, কী করবে—আপাতত তার কোনো ধারণা নেই তাদের। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের টেকনাফ ও উখিয়ার নতুন অস্থায়ী শিবিরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে সেনাবাহিনী। অধিকাংশই সেখানে যাচ্ছে। তবে কেউ কেউ আবার টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজারে তাদের পূর্বপরিচিত ব্যক্তিদের বাড়িতে বা পুরোনো শিবিরে চলে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সবাই যে হতদরিদ্র, তা নয়। অবস্থাসম্পন্ন লোকও আছেন। তাঁরা চেষ্টা করছেন পূর্বপরিচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে কক্সবাজার বা আশপাশে বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে উঠতে। আবার অনেকে চলে যাচ্ছেন চট্টগ্রামে। সেখান থেকে দেশের অন্য কোথাও যাবেন না, এমন কথাও জোর দিয়ে বলার উপায় নেই।
ঢাকা থেকে আসা মানবাধিকারকর্মী নুর খান  বলেন, সীমান্ত পার হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের গাড়িতে করে বালুখালী নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নামার পর কে কোথায় যাচ্ছে, তার কোনো ঠিক নেই। এদের পর্যবেক্ষণ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে করে রোহিঙ্গারা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
কক্সবাজার-উখিয়া সড়কে দেখা গেল, রাস্তায় কিছুক্ষণ পরপর তল্লাশিচৌকি। পথে গাড়ি থামিয়ে পরিচয় জানতে চাওয়া হচ্ছে। তবে কেউ যদি গ্রামের ভেতর দিয়ে সড়ক অতিক্রম করে, তা দেখার কোনো ব্যবস্থা নেই।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, সীমান্ত পার হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকে ব্যবসায়ীপাড়া, ঠান্ডাঝিরি, বিছামারা, গিলাতলি, মসজিদ গোলা, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়াসহ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের শিবিরে ফেরত পাঠানো হবে। তিনি বলেন, শিবিরে না গেলে রোহিঙ্গারা কোনো সুবিধা পাবে না, এটা জানার পর সবাই শিবিরে যেতে চাইছে।
কক্সবাজার শহরের বাসিন্দারা বলছেন, পৌরসভার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় শত শত রোহিঙ্গা পরিবার ঢুকে পড়েছে। তারা পাহাড়-জঙ্গলে অস্থায়ী ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেছে। কেউ কেউ কম দামে ভাড়া বাসায় উঠছে।
পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রহমান চৌধুরী  বলেন, পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে প্রায় ৭০ হাজারের রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে।
গত দুই দিনে শহরের পাহাড়তলী, বৈদ্যেরঘোনা, ঘোনারপাড়া, খাজা মঞ্জিল, লাইট হাউস, রুমালিয়ারছড়া, সাহিত্যিকা পল্লী, বিজিবি ক্যাম্প এলাকা, কলাতলী আদর্শগ্রাম, সমিতিপাড়া, চন্দ্রিমা সমিতি এলাকা, নতুন জেলগেট এলাকাসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় রোহিঙ্গাদের দেখা গেছে।
শহরে আশ্রয় নেওয়া আবুল মনজুর নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, টেকনাফের বাহারছড়া ও শামলাপুর উপকূল দিয়ে তাঁরা ঢুকেছেন। এরপর বিজিবি সদস্যরা তাঁদের গাড়িতে তুলে দিয়েছেন। সেখান থেকে এক দালাল তাঁদের ইজিবাইকে তুলে কক্সবাজার শহরের আদর্শগ্রাম পাহাড়ে নিয়ে এসেছেন। এখন সেখানেই আছেন।
শামলাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল মনজুর বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ইনানী সৈকতের কাছে পাটোয়ারটেক উপকূলে রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকাডুবির ঘটনায় ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও কয়েকজন। এর আগে টেকনাফ ও উখিয়ায় ২৫টির বেশি নৌকাডুবির ঘটনায় ১৩২ জন মারা গেছে। ইনানীতে নৌকায় করে আসা রোহিঙ্গারা শহরের দিকেই আসত।
জেলা প্রশাসক বলেন, যেসব রোহিঙ্গা শিবিরের বাইরে আশ্রয় নিয়েছে বা বসতি করছে, তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করে বালুখালী রোহিঙ্গা ত্রাণশিবিরে ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু জনতার সঙ্গে সারা দেশে মিশে যাওয়া রোহিঙ্গাদের কি আদৌ খুঁজে বের করা সম্ভব? জেলা প্রশাসক সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।

No comments:

Post a Comment

Your ADS in This Blog

Adbox