অজ্ঞান পার্টির ওষুধ চিহ্নিত করেছেন গবেষকেরা
গণপরিবহনে যাত্রীদের অজ্ঞান করতে একটি বিশেষ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করছে দুষ্কৃতকারীরা। গবেষকেরা বলছেন, বাসে, ট্রেনে বা লঞ্চে ট্রাঙ্কুলাইজার বা দ্রুত ঘুমানোর ওষুধ ব্যবহার করছে দুষ্কৃতকারীরা।
সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১০টি কোম্পানি ভিন্ন ভিন্ন নামে এই ওষুধ বাজারে বিক্রি করছে।
ওষুধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ওষুধ দ্রুত কাজ করে। এতে গভীর ঘুম হয়। আর পরিমাণে কম লাগে। এর বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার আগের বা পরের ঘটনা মানুষ মনে করতে পারে না। তবে যাদের কিডনি বা যকৃতের সমস্যা আছে, তাদের ওপর এই ওষুধ মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কিছু রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেছিলেন একদল চিকিৎসক ও গবেষক। তাঁরা দেখেছেন রোগীদের মূলত ট্রাঙ্কুলাইজার বা দ্রুত ঘুমানোর ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে সঙ্গে অন্য ওষুধের মিশ্রণ ছিল। রক্ত পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধ সম্প্রতি এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অব মেডিকেল টক্সিকোলজিতে ছাপা হয়েছে।
প্রবন্ধটির সহলেখক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ প্রথম আলোকে বলেন, বাসে, ট্রেনে বা লঞ্চে মানুষকে অজ্ঞান করে সবকিছু লুটে নেওয়ার খবর প্রায়ই শোনা যায়। বিষক্রিয়ায় মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়। কিন্তু বিষক্রিয়ার ধরন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা ছিল না। এই গবেষণার একটা উদ্দেশ্য ছিল, ঘটনার শিকার মানুষেরা কোন ধরনের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়, তা জানা।
রোগী ব্যবস্থাপনায় এই গবেষণা কাজে লাগবে বলে মনে করছেন গবেষকেরা। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে বেশ কয়েক ধরনের ঘুমের ওষুধ আছে। এর মধ্যে কিছু আছে ‘ট্রাঙ্কুলাইজার’ বা তীব্র ঘুমের ওষুধ। এটা খাওয়ানো বা ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। মানসিক রোগীদের কারও কারও এই ওষুধের প্রয়োজন হয়। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এমন ওষুধের কেনা, বেচা ও ব্যবহার নিষেধ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে বেশ কয়েক ধরনের ঘুমের ওষুধ আছে। এর মধ্যে কিছু আছে ‘ট্রাঙ্কুলাইজার’ বা তীব্র ঘুমের ওষুধ। এটা খাওয়ানো বা ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। মানসিক রোগীদের কারও কারও এই ওষুধের প্রয়োজন হয়। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এমন ওষুধের কেনা, বেচা ও ব্যবহার নিষেধ।
গবেষকেরা ৩৮ জন রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেছেন। এরা ২০০৮ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সবাই ছিল পুরুষ। এদের বয়স ছিল ১৭ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। চিকিৎসা চলাকালে এদের কারও কিছু খাওয়া এবং অজ্ঞান হওয়ার মাঝের সময়ের কোনো কিছু স্মরণে ছিল না। এরা প্রত্যেকেই তাদের সঙ্গে থাকা মূল্যবান সব জিনিস খুইয়েছিল।
হাসপাতালে ভর্তির এক ঘণ্টার মধ্যে তাদের রক্ত নেওয়া হয়। পরে পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা জার্মানির গেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেনসিক টক্সিকোলজিতে পাঠানো হয়েছিল।
প্রবন্ধে বলা হয়েছে, অপরাধীরা কৌশল হিসেবে চা, কফি, বিস্কুট, ডাবের পানি, অন্য কোমল পানীয়, ফল বা পানের সঙ্গে ওষুধ মিশিয়ে যাত্রীদের খাওয়ায়। যাত্রীর সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করে তারা এই কাজটি করে। আবার অনেক সময় স্বল্পমূল্যে চর্মরোগ, অ্যাজমা বা বাতের ব্যথার ওষুধ বিক্রির কথা বলে এগুলো খাওয়ায়। অসচেতন মানুষ এদের ফাঁদে পা দেয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ খান আবুল কালাম আজাদ গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের মেডিসিন বিভাগে ১০টি ইউনিট আছে। নিজে একটি ইউনিটের প্রধান। গত শুক্র-শনিবার তাঁর নিজের ইউনিটে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে অসুস্থ হয়ে সাতজন রোগী ভর্তি হয়েছিল। শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্যান্য ইউনিটে প্রায় ২৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। এদের মধ্যে পুলিশের একজন কর্মকর্তাও ছিলেন। ওই কর্মকর্তার ল্যাপটপসহ টাকা খোয়া গেছে।
খান আবুল কালাম আজাদ মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, যাত্রাপথে অপরিচিত মানুষের দেওয়া খাবার বা পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। আর দু-একটি ঘটনায় ধরা পড়ে দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ কেনা যায় বলে অজ্ঞান পার্টির লোকজন এর সুযোগ নেয়। এ ক্ষেত্রে সতর্কতা-সচেতনতাই মানুষকে নিরাপত্তা দেয়। আমরা সবাইকে বলি, যাত্রাপথে অপরিচিত কারও কাছ থেকে কিছু খাবেন না। বাসে-লঞ্চে খোলা খাবার খাবেন না। অনেক সময় ডাবের পানিও নিরাপদ না।’
No comments:
Post a Comment